ইউটিউবের মাধ্যমে দেশের অনেক মেধাবী তরুণ তাদের কাজ পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বদরবারে। আবার কাজ করছে ইউটিউবারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে। এমনই এক মেধাবী তরুণ আতিকুল ইসলাম। যিনি বর্তমানে ইউটিউবের টপ কন্ট্রিবিউটর ও ইউটিউব স্বীকৃত বাংলাদেশের প্রথম ইউটিউব প্রোডাক্ট এক্সপার্ট হিসেবে নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছেন।সম্প্রতি তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মাহতাব শফি
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ভিডিও প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনলাইন মাধ্যম ইউটিউব। এ মাধ্যমে সময় দেন না এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বর্তমানে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ এটি বিনোদন, খবর, শিক্ষা, বিপণন ও আয়ের বড় উৎসও। ইউটিউব নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশের মানুষের মধ্যে প্রবল ঝোঁক সৃষ্টি করেছে, আয়ের এবং ব্যবসার বড় ক্ষেত্রও সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেশের বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দারুণ সুযোগও যেন হাতছানি দিচ্ছে ইউটিউবে। সেই ইউটিউবের মাধ্যমে দেশের অনেক দক্ষ এবং মেধাবী তরুণ তাদের কাজ পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বদরবারে। আবার কাজ করছে ইউটিউবারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে। এমনই এক মেধাবী তরুণ আতিকুল ইসলাম। যিনি বর্তমানে ইউটিউবের টপ কন্ট্রিবিউটর ও ইউটিউব স্বীকৃত দেশের প্রথম ইউটিউব প্রোডাক্ট এক্সপার্ট হিসেবে নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছেন (https://productexperts.withgoogle.com/directory/087e05be-060c-4e36-8985-ebc24fe57ca6)।
আতিকুল ইসলাম ইউটিউবের কাজের পাশাপাশি একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে অনলাইন বিভাগে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কিছু ক্লায়েন্টকে ইউটিউব ও ডিজিটাল মার্কেটিংএ সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে তিনি এনটিভি (অনলাইন) এবং অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়ায় কাজ করেছেন।
আতিকুলের জন্ম পাবনা জেলার চাটমোহর থানার সিদ্ধিনগর গ্রামে। বাবা শাহজাহান আলী, মা রাশিদা পারভিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশব থেকেই ছিল তার কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই ২০১১ সালে শুরু।
সেই শুরুর কথা জানতে চাইলে আতিক বলেন, Upwork তখন Odesk নামে ছিল। শুরুটা হয় Social Media Marketing দিয়ে, এরপর Web Design নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার কয়েকটি কোম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে যুক্তরাজ্যের একজন ক্লাইন্টের রেসপন্সসিভ ওয়েব ডিজাইনের মাধ্যমে শুরু হয় আমার আয়। এরপর নিয়মিত কাজ করতে থাকি।
ইউটিউবের সাথে সম্পৃক্ততা কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৫ থেকে ওয়েব ডিজাইনের পাশাপাশি ইউটিউব মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করি, মার্কেটে তখন ইউটিউব মার্কেটিংয়ের চাহিদা বাড়তে থাকে। ভালো কিছু ক্লাইন্টের কাজ করতে থাকি, ইউটিউবের নতুন নতুন আপডেট যুক্ত হতে থাকে, তখন ইউটিউব ফোরামে নিয়মিত চোখ রাখতাম। ইউটিউব ফোরামে তখন থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াতাম। ইউটিউব এক্সপার্টদের উত্তরগুলি খুব ভালো লাগত, তখন ভাবতাম যদি আমি এদের মত হতে পারতাম। সেখান থেকেই সম্পৃক্ততা। তবে ভিজুয়াল কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থেকেই ইউটিউবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা।
ইউটিউব TC বা Top contributor আতিকুল ইসলামের কাছে বাংলাদেশে ইউটিউবারদের সীমাবদ্ধতা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েটর আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার ক্ষমতা রাখে। আমাদের দেশে যারা ইউটিউবে কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছে অনেকের কোয়ালিটি কনটেন্টের পরিমান খুবই কম, ভাঁড়ামি বিষয়টা সবার মাথায় সেটে বসেছে, যা থেকে বের হতে হবে নিজেকে। তবে নিজেকে এবং নিজের দেশকে উপস্থাপন করার ভালো একটা মাধ্যম এই ইউটিউব।
ইউটিউব নিয়ে লক্ষ্য বা ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে আতিকুল বলেন, আমি এখন ইউটিউব টিমের সঙ্গে জড়িত থাকলেও ভব্যিষতে ইউটিউব অফিসে সরাসরি কাজ করা এবং বাংলাদেশে ইউটিউবের সম্পূর্ণ ফিচার চালু করাসহ অফিস চালু করার ইচ্ছে রয়েছে।
দেশে যারা নতুন ইউটিউব নিয়ে কাজ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে আতিক বলেন, আপনি যা করতে ভালোবাসেন তাই ভিজুয়ালাইজেশন করে ট্রাই করতে পারেন। তবে ধৈর্য শক্তি থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সফলতার জন্য নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে, সেটা হতে পারে বছর বা তারও অধিক। অবশ্যই আপনার প্রশ্নগুলি এদিক ওদিক না খুঁজে ইউটিউব হেল্প সেন্টার বা ইউটিউব কমিউনিটি ফোরামে খুঁজুন। কাজের ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর খুবই জরুরি।
ইউটিউবের কাজকে পেশা হিসেবে কি নেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই। ইউটিউব যেমন বিনোদনের জন্যে ব্যবহার করা যায়, ঠিক তেমনি টাকাও ইনকাম করা যায়। নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে অ্যাডসেন্স বা অন্যান্য উপায়ে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এছাড়া জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিয়ে আপনি টাকা উপার্জন পারেন।
ইউটিউব নিয়ে তরুণ প্রজন্ম আরো কিভাবে ডেপলপ হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইন্ট তৈরির দিকে মনোযোগী হতে হবে। কপিরাইট এবং ফেয়ার ইউজ পলিসি নিয়ে প্রচুর জানতে হবে।
ইউটিউবে কাজ করার ক্ষেত্রে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের লক্ষ্যটা স্থির করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্য ঠিক রেখে সুন্দর করে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
ইউটিউবে আয় করার সহজ পদ্ধতি বা নিয়ম নিয়ে তিনি বলেন, শর্টকাট নিয়ম বলতে কিছু নেই, প্রোফেশনাল ক্ষেত্রে শর্টকাট কথাটা এড়িয়ে চলাটাই ভাল। এক্ষেত্রে উল্টো হবার সম্ভবনা বেশি থাকে। যেমন ধরুন আপনি নিয়মের বাইরে গিয়ে চ্যানেলের ভিউ/ সাবস্ক্রাইব বৃদ্ধি করলেন, যা দিয়ে এক সময় আপনার চ্যানেল কিন্তু ক্ষতির সম্মখিন হবেই। ইউটিউবের নিয়ম মেনে আপনার লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে যেতে হবে।
সফল ইউটিউবার হতে চাইলে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হয় -এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউটিউবে সাফল্য বলতে আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন। সাফল্য বিভিন্ন রূপে আসে এবং আপনি নিজেকে কোথায় সফল মনে করেন, তা নির্ভর করে নিজের ওপর। যেমন ধরুন, আপনি কোয়ালিটিফুল ভিডিও তৈরি করে সবার থেকে আলাদা হতে পারেন অথবা ভিউয়ের দিকে ফোকাস দিলে সেই ধরণের ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল হতে পারেন । তবে মনে রাখতে হবে কোয়ালিটি আর ভাইরাল এক নয়। এছাড়াও চ্যানেলের লক্ষ্য এবং কিছু বিষয় ঠিক করুন। যেমন- ধরেন আপনি ইনফোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করার চিন্তা করলেন, মনে রাখবেন এটা আপনার ফুল-টাইম জব। আপনি যদি নিজে কাজ করেন তাহলে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা কাজ করতে হবে, আর যদি আপনি প্রডিউস করেন তাহলে সব কিছু ঠিক থাকে তদারকি করা খুবই জরুরি।
এছাড়াও নতুন ভিজিটরদের আকৃষ্ট করতে হবে : আপনার চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবার এর থেকে নন সাবস্ক্রাইবার ভিজিটর আপনার ভিডিও বেশি দেখে, সেই জন্যে চ্যানেলের আউটলুক, কভার ডিজাইন, ট্রেইলার খুব আকর্ষণীয় হতে হবে এবং প্রতিটা থাম্বনেইলের ডিজাইনে গুরুত্ব দিতে হবে।
ইউটিউবের নিয়ম মেনে চলা : অনেকে চিন্তা করে অসাধু উপায়ে চ্যানেলের ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর। এই চিন্তা একদম বন্ধ করেন। কপি কনটেন্ট ব্যবহার করবেন না, ফেয়ার ইউজ পলিসি সম্পর্কে ভালো করে স্টাডি করে নিতে হবে। ইউটিউবের নিজস্ব academy থেকে শিখে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় সব কিছু https://creatoracademy.youtube.com/page/home।
অটল থাকা এবং ধারাবাহিকতা : প্রতিটি কাজে অটল থাকা এবং ধারাবাহিকতা রাখলে সফলতা আসে, তেমন ইউটিউবে কাজ করতে হলে ধারাবাহিকতা রাখতে হবে, রুটিন মেনে ভিডিও আপলোড দেয়া খুবই কার্যকর। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন এবং সময় বেঁচে নিতে হবে ভিডিও আপলোডের জন্যে।