করোনার প্রভাবে দেশের প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবসায়ীরাও আছেন দুশ্চিন্তায়। খাতটির বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র সব পর্যায়েই কী ধরণের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ ও সফল উদ্যোক্তার সফলতার গল্প জানাতে টেকআলো নিউজের মুখোমুখি বিসিএস পরিচালক ও চেয়ারম্যান, স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া। সাক্ষাতকারে মোঃ নাজিম উদ্দিন।
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া, চেয়ারম্যান, স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ, একজন তরুন ও সফল উদ্যোক্তা। আইসিটি খাতে অবদানের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটা প্রতিষ্ঠান। তিলে তিলে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন দেশের প্রায় ৪০০ জন আইসিটি প্রফেশনাল। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে ব্যাবসার পাশাপাশি সম্প্রতি নিজেকে ওতোপ্রোতো ভাবে যুক্ত করেছেন দেশের আইসিটি জগতের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এর সাথে। ব্যবসার শুরু থেকে সংগঠনটির সদস্য হিসেবে থাকলেও দেশব্যাপী সকল ব্যাবসায়িক পার্টনার ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধে নেমে পড়েন সমিতির তৃ-বার্ষিকী সম্মেলনের নির্বাচনী যুদ্ধে। এবং সে যুদ্ধে তিনি জয় লাভ করে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর সর্বকনিষ্ট নির্বাচিত পরিচালক হিসাবে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে জনসেবা করে যাচ্ছেন। জনাব মোঃ রাশেদ আলীর সাথে আলাপকালে জানা গেলো উনার জীবনে সফলতার গল্পঃ
টেকআলো নিউজ : আপনার শৈশব এবং পড়াশুনা সম্পর্কে কিছু বলেনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : বাবা সরকারি চাকরি করার সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার পড়াশোনা করার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে এস.এস.সি. আমি পাশ করেছি নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে এইচ.এস.সি. পাশ করেছি কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেছি রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে।
টেকআলো নিউজ : তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কের শুরু কিভাবেঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু আমি পেয়েছি, ওই সময়টাতে আমি হার্ডওয়ার এর ওপর বাংলাদেশের স্বনামধন্য কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড এ আমার ইন্টার্নশিপ কোর্স সম্পন্ন করি। পরবর্তী সময়ে নেটস্টার প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠান থেকে সেলস এর ওপর ইন্টার্নশিপ কোর্স সম্পন্ন করি। সেই থেকেই এই খাতে হাতেখড়ি।
টেকআলো নিউজ : কোন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : আমি শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেছি। যেখান থেকে আমি ইন্টার্নি করেছি। প্রথমে পার্টটাইম পরে ফুলটাইম পদ্ধতিতে চাকরি করেছি আমি। সেখানে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছি।
টেকআলো নিউজ : স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর শুরু কিভাবেঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : আমরা ৪ জন ৪ টা বড় কোম্পানিতে কর্মরত ছিলাম। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ২ বন্ধু মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের যাত্রা শুরু করি। পরে আমাদের সাথে বাকি ২ জন যোগ দেয়। শুরুতে মাল্টিপ্লান সেন্টার এর ৯ তলায় ছোট একটা শোরুম নিয়ে পথচলা। কর্পোরেট সেলস এবং হোম ডেলিভারি ছিল আমাদের তখনকার ব্যবসায়ের ধরণ। বর্তমানে আরও ২ জন সদস্য পরিচালক হিসাবে যোগ দিয়েছেন।
টেকআলো নিউজ : ব্যবসার মূল হাতিয়ার কি পূঁজি, শ্রম না সঠিক পরিকল্পনাঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : সবার প্রথমে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। এটাই একটা স্বপ্নকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যায়। এর পাশাপাশি প্রয়োজন পুজি। সাথে সততা, শ্রম এবং প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখলেই সফলতা আশা করা যায় বলে মনে করি।
টেকআলো নিউজ : যৌথ মালিকানা ব্যবসায় কিভাবে সফল হলেনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : যৌথ মালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সবচাইতে মূল্যবান বিষয় হল ইতিবাচক মানসিকতা। এর পাশাপাশি আমরা কারো কাজের ভুল না ধরে একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করেছি। সাথে আমরা আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী আমাদের কাজকে ভাগ করে নিয়েছি নিজেদের মধ্যে। ব্যবসায়ের শুরু থেকে বিক্রয়ত্তর সেবাকে প্রাধান্য দিয়েছি। মনে করি এটাই সফলতার মূল।
টেকআলো নিউজ : স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর পণ্য সম্পর্কে বলুনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : স্টার টেক সাধারনত সব ধরণের আইটি পণ্য নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি দুই ধরণের পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণে কাজ করছে। সফটওয়্যার (ইসেট এন্টিভাইরাস) এবং হার্ডওয়ার তথা গেমিং কম্পোনেন্ট নিয়ে কাজ করছি আমরা।
টেকআলো নিউজ : স্টার টেক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বলুনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : বর্তমানে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে ১৪ টি শাখার মাধ্যমে আইটি পণ্য বিক্রয় এবং ৩ টি শাখার মাধ্যমে বিক্রয়ত্তর সেবা প্রদান করছি আমরা। আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩৭০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করছেন। ভবিষ্যতে নেটওয়ার্কিং পণ্য সহ সম্পূর্ণ আইটি সল্যুশন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী আমরা।
টেকআলো নিউজ : একজন ভালো পার্টনার কিভাবে হয়ে ওঠা যায় বলে মনে করেন?
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : আমাদের হিসাবে সবসময় পরিবেশকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যাবসা পরিচালনা করা উচিত। প্রতিশ্রুতি এবং লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করলে এবং পরিবেশকের চাহিদাকে প্রাধান্য দিলে একজন ভালো পার্টনার হয়ে ওঠা সম্ভব।
টেকআলো নিউজ : কোভিড-১৯ এর লকডাউনে আপনারা কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন?
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : প্রথম দিকে আমাদের বিক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। কিন্তু লকডাউনের শুরু থেকে আমরা অনলাইনে সার্ভিস রিকুয়েস্ট নিয়ে রিমোট সার্ভিস সিস্টেম চালু করি। অনলাইনে আমরা ৫হাজার এর অধিক সেবা সম্পূর্ণ বিনা মুল্যে প্রদান করেছি। পরবর্তীতে আমাদের ক্রেতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের চাহিদা এবং অনুরোধের প্রেক্ষিতে অনলাইনে সেলস অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারি চালু । এরপর স্বল্প পরিসরে সরকারি নিয়ম মেনে মার্কেট খোলার পর ব্যবসা পরিচালনা করছি।
টেকআলো নিউজ : আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যবসায়িক উন্নয়নে ভূমিকা আছে কি?
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : আমাদের প্রতিষ্ঠানে সকলেই নিরলস ভাবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি স্টার টেক এর সকল অর্জন তাদেরই পরিশ্রমের কারণে সম্ভব হয়েছে।
টেকআলো নিউজ : আইসিটি ব্যবসার ভবিষ্যৎ কিঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : দিনে দিনে বাংলাদেশ এর প্রতিটা সেক্টর অনলাইন বা ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসছে বা আসবে। সেক্ষেত্রে আইটি পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং বাড়ছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ের উন্নয়নের সুযোগ আছে। বর্তমানে অনলাইনে পড়াশুনা, অফিস, ব্যবসা ইত্যাদি পরিচালনা হচ্ছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহ বিভিন্ন পণ্য কেনা-বেচা চালু হয়েছে। এটা একটা বড় ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করি।
টেকআলো নিউজ : বিসিএস পরিচালক হিসেবে কিভাবে সফল হতে চানঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : বিসিএস এর পরিচালক হিসাবে সারা দেশের সকল ব্যবসায়ীদেরকে সাথে নিয়ে সকলের জন্য একটা ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং সঠিক মুনাফা নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করছি। পাশাপাশি ক্রেতারা যেন সঠিক সেবা পায় সেই লক্ষে কাজ করার চেষ্টা করছি।
টেকআলো নিউজ : ডিজিটাল মার্কেটিং ও ই কমার্স ব্যবসার সুফল ও কুফল সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
মোঃ রাশেদ আলী ভুইঁয়া : প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই অনলাইন বা ডিজিটাল প্লাটফর্ম থাকা উচিত। এটার মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার সহজতর হয়। বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ের সফলতার পেছনে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যপক ভুমিকা রাখছে। একটা সময় মানুষ সরাসরি যেয়ে কেনাকাটায় অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষের চিন্তাভাবনা বা মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে। অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। খেয়াল করলে দেখবেন মোটামুটি সকল ধরণের সেবাই অনলাইনে পাওয়া যায়। লক্ষ্য করলে বোঝা যায় মানুষ সরাসরি গিয়ে কেনাকাটা থেকে দিন দিন সরে আসছেন। কিন্তু বাজার বড় হওয়ার কারণে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু কিছু বিক্রেতা ও ক্রেতা মানুষের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। যা এই সেক্টর এর সুনাম নষ্ট করছে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুনঃ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আইসিটি উন্নয়নে অতীতের ন্যায় কাজ করতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবো এবং পরিবার ও সমাজের কল্যাণে কাজ করে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার প্রবল ইচ্ছে থাকবে।